কেমন আছে বদরগঞ্জের চৌরির বিল গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা !
কামরুজ্জামান মুক্তা,বদরগঞ্জ(রংপুর)ঃ
টিন দিয়ে মোড়ানো সুন্দর পরিপাটি সাজানো বাড়ি। দূর হতে দেখতে তা অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। প্রতিটি বাড়ির পেছনে আছে একটি করে টয়লেট। আর প্রতিটি বাড়ি চৌরি নামক বিল দ্বারা ঘেঁরা। বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির টেক্স্রোরহাট সংলগ্ন এলাকার গুচ্ছগ্রাম এটি। পড়ন্ত বিকেলের গোধুলি লগ্নে গতকাল চৌরির বিল গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিলের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও সুন্দর পরিপাটি সাজানো ঘর এ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
জানা যায় ; এখানকার প্রতিটি মানুষই খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রেনির। সারাদিন হাড়-ভাঁঙ্গা খাঁটুনি শেষে সরকারের দেয়া শেষ আশ্রয়স্থলে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। তাই দিনের বেলা এই এলাকা থাকে সুনসান নীরবতা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গ্রামের বাসিন্দাদের কলকানিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো চৌরির বিল গুচ্ছগ্রাম এলাকা। চৌরির বিলের চার পাড়ে ৫০টি পরিবারের জন্য তৈরি হয়েছে ৫০টি বাড়ি। বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা সেখানে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন সত্যি। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যরা কাক ডাকা ভোরে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান। আর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই ঘরে ফেরেন। তবে তারা ঘরে ফিরলেও অনেককে থাকতে হয় অভুক্ত অবস্থায়। কেননা বাইরে গেলেই তো আর কাজ পাওয়া যায়না। আর কাজ না পেলে পেটে খাবার যাবেনা এটাই সত্যি। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার কিংবা মহিলা মেম্বার কেউই তাদের খোঁজ নেননা। ভূল করেও যদি তাদের কেউ খোঁজ নেন এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন অনেক ঘোরাঘুরির পর তাও তাদের কপালে জোটে দায় সারা গোছের কিঞ্চিত সাহায্য।
কথা হয় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রজিফা বেগমের সাথে, তিনি জানান ; ধান ভাঙ্গা মিলে তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামি সাইদুল ইসলাম মাছ ধরার যন্ত্র চাঁই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন ২ছেলের মধ্যে বড়ছেলের বিয়ে হয়েছে। সে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা খায়।কৃষি শ্রমিকের কাজ করে নিজের সংসারই সামলাতে পারেনা, বাবা-মাকে সাহায্য করবে কিভাবে? সাইদুল ইসলাম জানান ; চাঁই তৈরিতে বাঁশের প্রয়োজন হয়। বাঁশের যে দাম তাতে বাঁশ কেনা সম্ভব হয় না। ধার দেনা করে বাঁশ কিনলেও এবারে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেভাবে চাঁই বিক্রি হচ্ছে না। ফলে অনেক সময়ই তাদের অনাহারে থাকতে হয় । গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা বিধবা যতিনুর বেগম এসেছেন লালদীঘিরহাট এলাকা থেকে। তার সাথে আছেন একমাত্র নাতনিসহ তালাক প্রাপ্ত মেয়ে মোহছিনা বেগম। তিনি বলেন ; যৌতুক দিতে না পারায় মেয়েটিকে স্বামি তাড়িয়ে দিয়েছে । মা-মেয়ে মিলে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই।
অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলছে । তিনি আরও বলেন ;সরকার হয়তঃ আমাদের সহায়তা করে ঠিকই কিন্তু তা আমরা বাস্তবিক অর্থে পাই না ।
এখানকার বাসিন্দা সাজেদা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুড়িগ্রামের চিলমারিতে। স্বামি রহিম উদ্দিন আরেকটি বিয়ে করে সন্তানসহ সাজেদাকে তাড়িয়ে দেয়ায় ঠাঁই হয়েছে গুচ্ছ গ্রামে। অবশ্য ছেলে স্বপন মিয়া হোটেল শ্রমিকের কাজ করে বলে এখনো তাকে কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হয়নি। তবে তার পেটে ভালো খাবার কখনো পড়েনি। বাসিন্দা স্বাধীনা বেগম এসেছেন রামনাথপুর সর্দ্দারপাড়া হতে। স্বামি মনসুর আলি পেশায় কৃষি শ্রমিক। কেমন চলছে- এ কথা জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দেন ‘কেমন আর থাকি; তবে টানাটানি করে চলছে।’
রামনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান ; চাহিদার তুলনায় সরকারি বরাদ্দ সেভাবে পাওয়া যায়না। তারপরও গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের অনেককেই কর্মসৃজন প্রকল্পে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার কাজি আবেদা গুলশান মোবাইল ফোনে জানান ; গুচ্ছ গ্রামে বসবাসকারিদের পুনর্বাসনের জন্য বিআরডিপি হতে লোনের ব্যবস্থা, পুকুরে মাছ চাষের ব্যবস্থা, একটি বাড়ি একটি খামারের যাবতিয় সুযোগ সুবিধা সহ মহিলাদের কুটিরশিল্পে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা স্বাবলম্বি হতে পারে।
বদরগঞ্জ,রংপুর
তারিখ-১৩ ডিসেম্বর/১৬
মোবাইল-০১৭১৭৮৫০৯৬৪
কামরুজ্জামান মুক্তা,বদরগঞ্জ(রংপুর)ঃ
টিন দিয়ে মোড়ানো সুন্দর পরিপাটি সাজানো বাড়ি। দূর হতে দেখতে তা অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। প্রতিটি বাড়ির পেছনে আছে একটি করে টয়লেট। আর প্রতিটি বাড়ি চৌরি নামক বিল দ্বারা ঘেঁরা। বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির টেক্স্রোরহাট সংলগ্ন এলাকার গুচ্ছগ্রাম এটি। পড়ন্ত বিকেলের গোধুলি লগ্নে গতকাল চৌরির বিল গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিলের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও সুন্দর পরিপাটি সাজানো ঘর এ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
জানা যায় ; এখানকার প্রতিটি মানুষই খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রেনির। সারাদিন হাড়-ভাঁঙ্গা খাঁটুনি শেষে সরকারের দেয়া শেষ আশ্রয়স্থলে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। তাই দিনের বেলা এই এলাকা থাকে সুনসান নীরবতা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গ্রামের বাসিন্দাদের কলকানিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো চৌরির বিল গুচ্ছগ্রাম এলাকা। চৌরির বিলের চার পাড়ে ৫০টি পরিবারের জন্য তৈরি হয়েছে ৫০টি বাড়ি। বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা সেখানে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন সত্যি। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যরা কাক ডাকা ভোরে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান। আর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই ঘরে ফেরেন। তবে তারা ঘরে ফিরলেও অনেককে থাকতে হয় অভুক্ত অবস্থায়। কেননা বাইরে গেলেই তো আর কাজ পাওয়া যায়না। আর কাজ না পেলে পেটে খাবার যাবেনা এটাই সত্যি। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার কিংবা মহিলা মেম্বার কেউই তাদের খোঁজ নেননা। ভূল করেও যদি তাদের কেউ খোঁজ নেন এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন অনেক ঘোরাঘুরির পর তাও তাদের কপালে জোটে দায় সারা গোছের কিঞ্চিত সাহায্য।
কথা হয় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রজিফা বেগমের সাথে, তিনি জানান ; ধান ভাঙ্গা মিলে তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামি সাইদুল ইসলাম মাছ ধরার যন্ত্র চাঁই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন ২ছেলের মধ্যে বড়ছেলের বিয়ে হয়েছে। সে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা খায়।কৃষি শ্রমিকের কাজ করে নিজের সংসারই সামলাতে পারেনা, বাবা-মাকে সাহায্য করবে কিভাবে? সাইদুল ইসলাম জানান ; চাঁই তৈরিতে বাঁশের প্রয়োজন হয়। বাঁশের যে দাম তাতে বাঁশ কেনা সম্ভব হয় না। ধার দেনা করে বাঁশ কিনলেও এবারে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেভাবে চাঁই বিক্রি হচ্ছে না। ফলে অনেক সময়ই তাদের অনাহারে থাকতে হয় । গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা বিধবা যতিনুর বেগম এসেছেন লালদীঘিরহাট এলাকা থেকে। তার সাথে আছেন একমাত্র নাতনিসহ তালাক প্রাপ্ত মেয়ে মোহছিনা বেগম। তিনি বলেন ; যৌতুক দিতে না পারায় মেয়েটিকে স্বামি তাড়িয়ে দিয়েছে । মা-মেয়ে মিলে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই।
অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলছে । তিনি আরও বলেন ;সরকার হয়তঃ আমাদের সহায়তা করে ঠিকই কিন্তু তা আমরা বাস্তবিক অর্থে পাই না ।
এখানকার বাসিন্দা সাজেদা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুড়িগ্রামের চিলমারিতে। স্বামি রহিম উদ্দিন আরেকটি বিয়ে করে সন্তানসহ সাজেদাকে তাড়িয়ে দেয়ায় ঠাঁই হয়েছে গুচ্ছ গ্রামে। অবশ্য ছেলে স্বপন মিয়া হোটেল শ্রমিকের কাজ করে বলে এখনো তাকে কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হয়নি। তবে তার পেটে ভালো খাবার কখনো পড়েনি। বাসিন্দা স্বাধীনা বেগম এসেছেন রামনাথপুর সর্দ্দারপাড়া হতে। স্বামি মনসুর আলি পেশায় কৃষি শ্রমিক। কেমন চলছে- এ কথা জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দেন ‘কেমন আর থাকি; তবে টানাটানি করে চলছে।’
রামনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান ; চাহিদার তুলনায় সরকারি বরাদ্দ সেভাবে পাওয়া যায়না। তারপরও গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের অনেককেই কর্মসৃজন প্রকল্পে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার কাজি আবেদা গুলশান মোবাইল ফোনে জানান ; গুচ্ছ গ্রামে বসবাসকারিদের পুনর্বাসনের জন্য বিআরডিপি হতে লোনের ব্যবস্থা, পুকুরে মাছ চাষের ব্যবস্থা, একটি বাড়ি একটি খামারের যাবতিয় সুযোগ সুবিধা সহ মহিলাদের কুটিরশিল্পে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা স্বাবলম্বি হতে পারে।
বদরগঞ্জ,রংপুর
তারিখ-১৩ ডিসেম্বর/১৬
মোবাইল-০১৭১৭৮৫০৯৬৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন