কামরুজ্জামান মুক্তা,বদরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধিঃ
আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। পোষ্টার ব্যানার ফেষ্টুনের মাধ্যমে প্রার্থীরা এতদিন সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তারা নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছে মটরসাইকেল শো-ডাউন আর জনসভা করে। রংপুর-২ আসনটি বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১২হাজার ৭৭৫।
স্বাধীনতার পর হতে এই আসনটি আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও ৯০ দশকের পর হতে এ আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। ওই সময়টাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে। এ কারনে এ আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পায়। সময়ের সাথে সাথে জাতীয় পার্টির ঘন ঘন সিন্ধান্ত বদল সহ প্রার্থী বদলের কারনে জাতীয় পার্টির কর্মিদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় জনপ্রিয়তা অনেকটা ম্লান হতে চলেছে। যদিও এখনও গ্রামে গঞ্জে রয়েছে তাদের ভোট ব্যাংক।
গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,এ আসনটিতে আগে আওয়ামিলীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে লড়াই চললেও এবারে আওয়ামিলীগ,জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মধ্যে হবে ত্রিমুখি লড়াই। আর যদি এখানে শুধু মহাজোটের প্রার্থী হয় তবে লড়াই হবে মহাজোট ও জোটের মধ্যে।
আওয়ামিলীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক যারা তারা হলেন,বর্তমান এমপি আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক চৌধুরি ডিউক। তিনি বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি। রাজশাহি কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ডঃ এম শাহ্ নওয়াজ আলি,বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বিশ^নাথ সরকার বিটু,সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রি আনিছুল হক চৌধুরির ছেলে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরি।
১৪ দলের প্রার্থী হতে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন রংপুর জেলা জাসদ(ইনু) এর সাধারন সম্পাদক কুমারেশ রায়।
জাতীয় পার্টি তথা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন বদরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরি সাবলু। এছাড়াও সাবেক এমপি আনিছুল ইসলাম মন্ডল,মোকাম্মেল হক চৌধুরি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী,সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলি সরকার,সুপ্রিম কোর্ট জাতীয়তাবাদি আইনজীবি ফোরামের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট গোলাম রসুল বকুল ও বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও তরুন বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম।
এছাড়াও এখনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালাচ্ছেন তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন।
আওয়ামিলীগের বর্তমান এমপি আহসানুল হক চৌধুরি ডিউক জানান,জননেত্রি শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ অনেকদুর এগিয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই আসনের এমপি হওয়ায় আমি বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নমুখি সরকার ক্ষমতায় আর তার আমি এমপি হওয়ার কারনে আমার এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় তরুন ভোটারদের মধ্যে আস্থাসহ ভালবাসা অর্জন করতে পেরেছি। দল যদি আবারো আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি এই আসনটি নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারবো ইনশাল্লাহ্।
বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বিশ^নাথ সরকার বিটু জানান,আমি এক সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলাম। সেই ছাত্রজীবন হতে সুখে দুখে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছি। একারনে আমার এলাকার মানুষরা আমাকে ভালবেসে বর্তমান এমপিকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলো। দীর্ঘদিন ধরে আমি এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি এবং ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। আমি আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড.এম শাহ্ নওয়াজ আলি জানান,দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো।
সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রি আনিছুল হক চৌধুরির ছেলে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরি জানান,পৌরসভা নির্বাচন,উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সহ ইউপি পরিষদ নির্বাচনে নিজে বিজয়ী হয়ে প্রমান দিয়েছি এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। এ সব বিবেচনায় নেত্রি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নেত্রিকে জয় উপহার দিতে পারবো।
১৪ দলের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক জাসদ(ইনু)নেতা কুমারেশ রায় জানান,১৪ দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশি অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরি সাবলু জানান,জাতীয় পার্টিতে আমি একক প্রার্থী। কারন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম। সেই সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নির্দেশেই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। পার্টি চেয়ারম্যান অনেক বার আমাকে এই আসনটির প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। তার নির্দেশেই আমি দীর্ঘদিন হতে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির অপর নেতা সাবেক এমপি আনিছুল ইসলাম মন্ডল জানান,যদি জাতীয় পার্টি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো।
সাবেক এমপি ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী জানান,দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো। দল যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকেও নমিনেশন দেয় তবুও আমি তার পক্ষে কাজ করবো।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলি সরকার জানান,বিএনপি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো।
বিএনপি হতে মনোনয়ন প্রত্যাশি তরুন নেতা এ্যাডভোকেট গোলাম রসুল বকুল জানান,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে আমি এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ বিএনপির সৎ যোগ্য ও তরুন নের্তৃত্বের পক্ষে থাকবে বলে আমি বিশ^াস করি। দল আমাকে নমিনেশন দিলে আমি ধানের শীষকে উপহার দিবো।
বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম জানান,স্বাধিনতার পর হতে এই আসনটি একবার পেয়েছিলো বিএনপি। তারপর হতে স্থানিয় নির্বাচন সহ জাতীয় নির্বাচনে কোন প্রার্থীই ভাল করতে পারেনি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর চাইতে বেশি সংখ্যক ভোট দিয়ে আমার এলাকার ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করেছে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো।
তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন জানান,আমি সরকার দলীয় লোক। আমাদের মহাজোটে প্রার্থী অনেক। তবুও যদি সুযোগ পাই তাহলে নির্বাচন করবো।
বদরগঞ্জ,রংপুর
তারিখ-২৫অক্টোবর/১৮
মোবাইল-০১৭১৭৮৫০৯৬৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন